Ad Code

যমুনার ফেনা দূষণের অবসান! বাঙালি বিজ্ঞানীর যুগান্তকারী আবিষ্কার

যমুনার ফেনা দূষণের অবসান! বাঙালি বিজ্ঞানীর যুগান্তকারী আবিষ্কার



দিল্লির যমুনা নদী মাঝেমধ্যেই ফেনায় ভরে ওঠে, যার কারণে দূষণ ও জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি নিয়ে বারবার শোরগোল পড়ে। তবে এবার সেই সমস্যার স্থায়ী সমাধান আসতে চলেছে এক বাঙালি বিজ্ঞানীর হাত ধরে। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দেবনাথ ঘোষাল ও তাঁর গবেষক দল আবিষ্কার করেছেন এমন একটি ব্যাকটেরিয়া, যা ফেনা তৈরিকারী ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া *গর্ডোনিয়া অ্যামোরি*-কে নিমেষে ধ্বংস করে দিতে পারে।



দেবনাথ ঘোষাল বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ছাত্র এবং বোলপুরের কাছারিপট্টির বাসিন্দা। ২০০১ সালে মাধ্যমিকে রাজ্যে দ্বাদশ স্থান অধিকার করেছিলেন। তিনি বিশ্বভারতীর শিক্ষাভবন থেকে কেমিস্ট্রিতে স্নাতক হন, পরে মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ থেকে বায়োলজিক্যাল সায়েন্সে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা এবং ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (ক্যালটেক)-এ পোস্ট ডক্টরেট সম্পন্ন করে বর্তমানে মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার দায়িত্বে রয়েছেন।



বিশ্বের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলের দূষিত জলে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে তৈরি হয় ফেনা, যার মূল কারণ গর্ডোনিয়া অ্যামোরি নামক ব্যাকটেরিয়া। এই দূষণ মোকাবিলায় সাধারণত ব্যবহৃত হয় রাসায়নিক পরিশোধন পদ্ধতি, যা খরচসাপেক্ষ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।


এই সমস্যার বিকল্প পরিবেশবান্ধব সমাধান খুঁজতেই দেবনাথ ঘোষাল তাঁর গবেষক দলকে নিয়ে শুরু করেন গবেষণা। মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল সায়েন্স বিভাগের অধীনে ইংল্যান্ডের ম্যাথু জনসন, অস্ট্রেলিয়ার জেসন রোজ এবং ইরানের মিলাড রেহানির সঙ্গে মিলে ২০২২ সালে শুরু হয় এই গবেষণা।


দলটি খুঁজে পায় এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া যার নাম মাইকোসিনব্যাক্টর অ্যামালিটিকাস। এটি একধরনের ন্যানো ব্যাকটেরিয়া, যার আকার অন্যান্য ব্যাকটেরিয়ার পাঁচভাগের এক ভাগ হলেও এর শক্তি অনেকগুণ বেশি। এটি গর্ডোনিয়া অ্যামোরিকে চিহ্নিত করে প্রথমে হুকের মতো গঠন তৈরি করে তাকে আঁকড়ে ধরে, এরপর ছুরির মতো প্রোটিন কমপ্লেক্স তৈরি করে তাকে ধ্বংস করে দেয়। এই পুরো প্রক্রিয়া এতটাই দ্রুত ঘটে যে গর্ডোনিয়া কোনো প্রতিরোধই করতে পারে না।


এই আবিষ্কারের পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে অত্যন্ত জটিল ও বিরল ইলেকট্রন ক্রায়োটোমোগ্রাফি মাইক্রোস্কোপি পদ্ধতিতে। বিশ্বের খুব অল্প কয়েকজন বিজ্ঞানী এই পদ্ধতিতে দক্ষ।


গবেষণার ফলাফল আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জার্নাল Nature Communications-এ প্রকাশিত হয়েছে। ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা এই প্রযুক্তি নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দেবনাথ ঘোষাল নিজে চান এই গবেষণার প্রয়োগ ভারতেও দ্রুত শুরু হোক, যাতে দেশের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য এই আবিষ্কার কাজে লাগে।


দূষণের বিরুদ্ধে এই আবিষ্কার এক নতুন দিগন্তের সূচনা। বাঙালি বিজ্ঞানীর এই আন্তর্জাতিক কৃতিত্বে গর্বিত তাঁর শহর বোলপুর ও গোটা দেশ। এখন শুধু অপেক্ষা এর বাস্তব প্রয়োগের।

Post a Comment

0 Comments

Close Menu